| রবিবার, ০৩ মে ২০২০ | পড়া হয়েছে 187 বার
ওমর শাহ : বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জাপানের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাপনা চাপে থাকলেও কভিড-১৯ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে আশার আলো দেখছেন দেশটির ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা। প্যানেলের পর্যবেক্ষক হিসাবে কাজ করা সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ আকিফমি ইমামুরা টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের এ আশার কথা জানান।
করোনা মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা দেশের জনসাধারণ মেনে চলার কারণেই করোনা রোধে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির করোনা ভাইরাস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্যানেল।
ওই চিকিৎসক প্যানেল ২ মে পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছে যে, জাপানের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে চিকিৎসা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ চাপের মধ্যে রয়েছে। এবং চিকিৎসা সেবায় পুরোপুরি ধস নামার আগেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
যদিও জাপানে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ সামগ্রিকভাবে হ্রাস পেয়েছে, তবে এই প্রবণতা কতটা কমিয়ে আনতে পারে তা হাসপাতালের উপর চাপ সীমিত হওয়ার উপর নির্ভর করছে বলে জানায় ওই বিশেষজ্ঞ প্যানেলটি।
আকিফমি ইমামুরা বলেছেন, নতুন রোগীর সংখ্যা কমছে, তবে মারাত্মক ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।
মারাত্মক ও গুরুতর পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে হাসপাতালের বিছানাসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদীর যত্ম নেওয়া প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে করোনা ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী হবে না তবে এটি ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ আকিফমি ইমামুরা আরো বলেন, করোনার বোঝা এখনও আছে। এটি খুব শীঘ্রই যে কোনো সময় চলে যাচ্ছে না। সংক্রমণের হ্রাস উন্নতির দিকে তবে তা খুব মন্থর গতির।
করোনায় সংক্রমণের এই নিম্নমুখী প্রবণতার জন্য জাপানের স্বাস্থ্য নীতিতে সাম্প্রতিক যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তার ফল। সম্প্রতি জাপান সরকার মৃদু উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসা করতে হোটেল ব্যবহার করছে।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বোঝা হ্রাস করার উদ্যোগ হিসেবে দেশজুড়ে ১০ হাজার এরও বেশি হোটেল কক্ষ মৃদুলক্ষণ দেখা করোনা রোগীদের পজিটিভ কিনা তা পরীক্ষা জন্য রাখা হয়েছে।
এর ফলে চিকিৎসা কর্মীদের উপর অনেকটা চাপ কমেছে। হোটেলকে অস্থায়ী হাসপাতাল বানানোর পর ডাক্তার ও নার্সদের পক্ষে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়া সহজ হচ্ছে। এর ফলে মারাত্মক রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে তারা মনোযোগ দিতে পারছেন বলে জানান তিনি।
এটি এখন সবচেয়ে বেশি আশার আলো দেখাচ্ছে। আমরা যতটা সম্ভব গুরুতর অবস্থায় অনেক রোগীকে বাঁচাতে চাই বলে ইমামুরা জানান।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, যুদ্ধের সমাপ্তির পরে প্রথমবারের মতো পুরো জাতি একে অপরকে সহায়তা করছে। জাপানে তুলনামূলকভাবে সংক্রমণের সংখ্যা কম হওয়ার জনসাধারণ আইসোলোশনের নির্দেশনা মেনে চলার কারণে হয়েছে।
অনেক দেশে নগরব্যাপী লকডাউন করা হলেও তারা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ না করতে পারলেও জাপান নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে জাপানে লকডাউন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে মনে করেন তিনি। এই সহায়তা চলমান রাখার আহবান জানান তিনি।
জাপানের ওই বিশেষজ্ঞ প্যানেলটি বলছে, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা রোধ করার জন্য প্রতিটি এলাকার অধীনে একেকটি হাসপাতালকে নিযুক্ত করলে লোকজনদেরকে জোর করে হাসপাতালে ভর্তির পরিবর্তে কিছুটা গুরুতর রোগীদের প্রতি মনোনিবেশ করতে ও কম অসুস্থদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে সহায়ক হবে।
করোনাভাইরাস প্যানেলটি আরো বলছে, সরকারকে পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন টেস্টগুলো চালানোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের হাসপাতালে ইনফেকশন রোধ করতে আরও ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম-পিপিই সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
চলতি সপ্তাহে টোকিওতে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। টোকিও মেট্রোপলিটনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনায় ৯ জন মারা গেছে যা রাজধানীতে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ এক দিনের মৃত্যুর সংখ্যা।
সূত্র: জাপান টুডে
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৩ মে ২০২০
জাপানের প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা | pr placid