বিপ্লব গোস্বামী | শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | পড়া হয়েছে 46 বার
বরাক উপত্যকার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল।কবিগুরুর পাদ স্পর্শে ধন্য হয়েছিলো বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জের মাটি।সেটি ১৯১৯ সালের কথা, সুরমা ট্রেনে চড়ে শ্রীহট্টে যাবার পথে রবীন্দ্রনাথ নেমেছিলেন বদরপুর স্টেশনে।যেখানে মাত্র তিন মিনিট ট্রেন দাঁড়ানোর কথা ছিল,সেখানে বদরপুরবাসীর অনুরোধে ও রেল কতৃপক্ষের অনুমতিতে সুরমা মেল দাঁড়িয়ে ছিল ২৫ মিনিট।প্লেটফর্মে কবিগুরুকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়।কবিগুরু সেদিন মুগ্ধ হয়ে ছিলেন বরাকবাসীর অভ্যর্থনায়।কবিগুরু সেদিন বরাকবাসীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন খুব ভ্রমণ পিপাসু।আর আসাম ছিল কবিগুরুর ভ্রমণ প্রিয় স্থানদের মধ্যে অন্যতম একটি স্থান।আসামে কবি মোট তিন বার এসেছিলেন।প্রথম এসেছিলেন ১৯১৯ সালে, তারপর ১৯২৩ সালে আর শেষ ১৯২৭ সালে আসামে এসেছিলেন বিশ্বকবি।রবীন্দ্রনাথকে প্রথম অসাম ভ্রমণে আমন্ত্রণ জানিয়েছিন অসমের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ সূর্যকুমার ভূঁইয়া।১৯১৮ সালের ৪ই জুলাই বিশ্বকবিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিটি লিখে ছিলেন সূর্যকুমার।সূর্যকুমার ভূঁইয়ার চিটি লিখার প্রায় দেড় বছর পর ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর কবিগুরু প্রথম অসম ভ্রমণে এলেন।কবিগুরুর সঙ্গে ছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধু প্রতিমা দেবী,দিনেন্দ্রনাথ ও কমলা দেবী।
বরাক উপত্যকার সঙ্গে যে বিশ্বকবির নিবিড় সম্পর্ক ছিলো তার সবচেয়ে বড় যোগসূত্র হচ্ছে কাছাড়ের শিলচর শহর।আর শিলচরের সঙ্গে কবির সবচেয়ে বড় যোগসূত্র তো ছিল অনিল চন্দ ও রাণি চন্দ।রাণি চন্দের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অতি ঘনিষ্ট।অনিল চন্দ তো ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সচিব।অনিল চন্দের স্ত্রী রাণী চন্দ ছিলেন শান্তিনিকেতনের ছাত্রী ও চিত্র শিল্পী এবং রবীন্দ্রনাথের খুবই ঘনিষ্টভাজন।রবীন্দ্রনাথ যখন অসুস্থ ছিলেন তখন অনেক সময় কবি মুখে মুখে বলতেন আর রাণী চন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে লিখে দিতেন।তাছাড়া রবীন্দ্র নাথের অন্তিম যাত্রার সময় পর্যন্ত রাণী চন্দ কবির সঙ্গে ছিলেন।এমনকি কবির অন্তিম যাত্রার ধুতি ,পাঞ্জাবি ,চাদর ,চন্দন মালা দিয়ে সাজানো হয় তখন রাণী চন্দ কবির হাতে পদ্ম কোরক তুলে দিয়েছিলেন।এছাড়া কবিগুরুর শেষের কবিতায়ও রয়েছে শিলচরের কথা।
১৩৪৭ সালে জ্যোৎস্না চন্দ শিলচর থেকে নারীদের পত্রিকা “বিজয়িনীর” সম্পাদনা করেছিলেন।এই পত্রিকার নামকরণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া।কবির জন্য বাণিও পাঠিয়েছিলেন কবিগুরু।কবি লিখেছিলেন
“হে বিধাতা,
রেখেনা আমারে বাক্যহীনা
রক্তে মোর বাজে রুদ্রবাণা।।”
শিলচরের খ্যাতনামা আইনজীবী হেমচন্দ্রের এক মাত্র কন্যা যুথিকা দত্ত শান্তিনিকেতনের ছাত্র ছিলেন।শান্তিনিকেতনে তিনি সংস্কৃত নিয়ে এম.এ পাশ করে ছিলেন। তিনি খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন।১৯৩৯ সালে যুথিকা দত্তের অকাল মৃত্যু ঘটে।মৃত্যুর তিন দিন পর প্রিয় যুথিকার উদ্দেশ্যে কবিগুরু লিখেছিলেন
“এসেছিলে জীবনের আনন্দ দূতিকা
সহসা তোমায় যদি করিল হরণ
নির্মম মরণ
পারে কি করিতে তবু চুরি
তরুণ প্রাণের তব করুণ মাধুরী,
আজো রেখে গেছে তার চরম সৌরভ
চিত্ত লোকে স্মৃতির গৌরব।”
এছাড়া শিলচরের কিছু পত্রিকা বিশ্বকবির আশীর্বাদ পেতে সক্ষম হয়েছিল।কিছু পত্রিকা কবিগুরুর আশীর্বাদ স্বরূপ বাণী পেয়ে ধন্য হয়েছিল।অরুন কুমার চন্দ্রের অনুরোধে শিলচরের “সপ্তক” পত্রিকায় বিশ্বকবি আশীর্বাবাণী পাঠিয়ে ছিলেন।কবি লিখে ছিলেন
“সাত বর্ণ মিলে যেথা দেখা দেয় এক শুভ্র জ্যোতি
সব বর্ণ মিলে হোক ভারতের শক্তির সংহতি।”
রবীন্দ্র যুগ থেকেই বরাক-রবির মধ্যে এক নিবিড় ঘন সম্পর্ক ছিল।আর আজো বরাক উপত্যকার প্রতি জন বাঙ্গালির হৃদয় আসনে কবিগুরু জায়গা করে আছেন আর অনন্ত কাল ধরে থাকবেনও।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জাপানের প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা | rita rita