অনলাইন ডেস্ক | মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর ২০২০ | পড়া হয়েছে 44 বার
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, বাজার নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধে বিভিন্ন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ জড়িত।
আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ আয়ের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাত হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে।
সর্বশেষ ৪ অক্টোবর দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে দুইজন, আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।
নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপের সঙ্গে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ অক্টোবর দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে জানা যায়।
পুলিশের তথ্য মতে, গত এক বছরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ক্যাম্পে নিহত হয়েছে ৪৬ রোহিঙ্গা।
এদের মধ্যে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ২৩ জন। নিহতদের প্রায় সবাই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। এরা ইয়াবা ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত।
রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী আবদুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাতের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে চাকমারকুল ক্যাম্প-২১ থেকে ক্যাম্প-২৭ জাদিমুরা পর্যন্ত সাতটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। তার কথাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অঘোষিত আইন।
খুন থেকে গুম, মাদক পাচার থেকে আদম পাচার এমন কোনো অপরাধ নেই হাকিম ডাকাত ও তার লোকজন করে না। টেকনাফের আলোচিত নুরুল কবির হত্যা, সিএনজি ড্রাইভার মো. আলী হত্যা, নতুন পল্লানপাড়ার সিরাজ মেম্বার ও মুন্ডি সেলিম হত্যা, আবদুল হাফিজ ও তোফায়েল হত্যাসহ অনেক হত্যা মামলার আসামি এই হাকিম ডাকাত।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তালিকাভুক্ত এই সন্ত্রাসীকে ধরতে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করা হলেও তাকে ধরা যায়নি। তবে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তার দুই ভাইসহ বাহিনীর নয় সদস্য।
শুধু হাকিম ডাকাত, মাস্টার মুন্না, হাফেজ জাবের, আনাস, ইসলাম মাহমুদ, সেলিম, সাইফুসহ এরকম এক ডজন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
রোহিঙ্গা এসব সন্ত্রাসীদের ধরতে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাব। এসব অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন থেকে হেলিকপ্টার। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি আস্তানা। কিন্তু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের শীর্ষ কাউকে ধরা যায়নি।
জানা যায়, র্যাবের অভিযানে পাহাড়ে বেশ কিছু আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর হাকিম ডাকাত এখন কুতুপালং এলাকায় আত্মগোপন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের শীর্ষ কাউকে আটক করা না গেলেও সাম্প্রতিক অভিযানে অনেক সাফল্য এসেছে। অনেক তথ্য উপাত্ত পেয়েছে র্যাব।
উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিশাল এই রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে পরিচালিত করার মতো কোনো সংগঠন অথবা নেতৃত্ব তাদের মধ্যে তবে বেশির ভাগ ক্যাম্পে কর্তৃত্ব করছে সন্ত্রাসী গ্রুপ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে তারা সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী হতে বাধ্য করছে।
সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করতে পারে না। ক্যাম্পে গত এক বছরে অর্ধশত খুন হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহ দেখিয়েছিল।
জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা আরিফ উল্লাহ মনে করতেন, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে না থাকলে কোনোদিন তাদের অধিকার আদায় হবে না।
প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা এই বার্তা দেয়, কেউ প্রত্যাবাসনের কথা বললে পরিণতি এমন নির্মম হবে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন কিছু লোক এখানে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের চলাফেরার ওপর নজরদারি রাখে।
তারাই সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যাওয়ার জন্যও প্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, দিনের আলোয় যেমন-তেমন, রাত হলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে।
যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গারা ততই অপরাধ ও মাদকপ্রবণ হয়ে উঠছে। গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগে শতাধিক মামলা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: সমকাল
বাংলাদেশ সময়: ৮:২৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর ২০২০
জাপানের প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা | Omar Saha