জিনাত নাজিয়া | বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ | পড়া হয়েছে 265 বার
আজ আকাশটা অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি পরিচ্ছন্ন। মনে হয় পূর্নিমা লেগেছে।চাঁদের আলোয় পৃথিবী ঝলমল করছে।রিয়ার আজ এসব দেখার কথা নয়।ও আজ চিরকালের জন্য এ বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছে। বাবার আদরের রাজকন্যা, মায়ের আহ্লাদী মেয়ে, ছোট ভাইয়ের লক্ষী বাবুনি, এইসব ভালোলাগা গুলো ছেড়ে চলে যেতে হবে, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। ঐ বাড়িতে ও কি আমায় এরকম ভালোবাসবে সবাই, জানিনা…। রিয়ার ভাবনাগুলো আজ কেন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কেমন হবে ওর বর, বরের বাড়ির অন্য সবাই ওকে ভালোবাসবে তো? নানারকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে রিয়া কখন যেন শ্বশুর বাড়ি চলে এলো।
কেউ একজন ওকে এনে বাসর ঘরের খাটে বসালো। জানালা গলে জোছনার মায়াবী আলো এসে আছড়ে পড়েছে ওর বিছানায়। মিষ্টি একটা ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আছে পুরো ঘরময়। খুব ভালো লাগছে রিয়ার। অনেক ক্ষন মোবাইলে সময় কাটালো রিয়া।হঠাৎ ঘড়িতে নজর পড়তেই চমকে উঠলো।একি রাত নয়টা বাজে, কেউ একজন আমার খবর ও নিলোনা।বর গেলো কোথায়, কি হচ্ছে আমার সাথে?
একটু নড়েচড়ে বসতেই বালিশের পাশ ঘেসে একটা চিরকুট হাতে এলো রিয়ার।তাতে লেখা – ” রিয়া, লক্ষী বৌ আমার। ছবি দেখেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। কাছ থেকে তোমায় দেখতে গিয়ে ও সুযোগ হয়ে উঠনি। অনেক অনেক ভালোবাসি তোমায়।উপরওয়ালা সবকিছু এতো এতো বেশি দিয়ে কেন জানি আমার কন্ঠে কথা বলার শক্তিটা কেড়ে নিয়েছেন। সব খারাপের মাঝেই নাকি ভালো কিছু লুকিয়ে থাকে। হয়তো তোমাকে পাওয়ার জন্যই…।
আমি তোমাকে কোনোদিন অসন্মান করবোনা, এমনকি আমি বেঁচে থাকতে পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নাই তোমায় অসন্মান করবে। জানিনা সবাই কিভাবে বৌকে ভালোবাসে,তোমায় আমি আমার সবটুকু দিয়ে ভালো রাখতে চেষ্টা করবো।জানি তারপর ও তুমি চলে যাবে।শুধু অনুরোধ অন্তত একটা সপ্তাহ থেকে যাও।তাহলে তুমি বুঝতে পারবে আমি কেমন ছেলে। তুমি না চাইলে কখনো তোমার কাছে আসবনা। খুব … খুবই ভালোবাসি তোমায়…অপেক্ষায়
থাকলাম।তোমারই ” রাজিন”
বাইরে এতো হৈচৈ কিসের? তাড়াতাড়ি চিরকুটটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখে উঁকি দিতেই রিয়া দেখলো হন্তদন্ত হয়ে বাবা ঢুকছেন।বাসরঘরের দরজা খুলে রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে বললেন, ” রিয়া চলে আয় মা,এরা আমাদের সাথে চিটিংবাজি করেছে। এদেরকে আমি পুলিশে দিব”। বাবার চোখে মুখে লেপ্টে রয়েছে হতাশার কালো ছায়া। বাবাকে শান্ত করে বসালো রিয়া, বললো,
” বাবা,তুমি মাত্র দুইদিনের নোটিশে তোমার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছ। সুন্দর চেহারা আর ভালো রেজাল্ট, ভালো চাকরি, দেখে তো তোমার মাথাখারাপ অবস্থা ছিলো তখন। মাকে তো দিলেই না আমাকে ও একটু কথা বলতে দাওনি। এখন বলছ আবার বিয়ে দিবে।”
” আমায় ক্ষমা করে দে মা,অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। কিভাবে এই ছেলের সাথে সংসার করবি, ও তো কথাই বলতে পারেনা। চলে আয় মা, আমি তোর আবার বিয়ে দিব। ”
” না বাবা, মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়,তাছাড়া এই ছেলে কে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ও কথা বলতে পারে না তো কি হয়েছে আমি তো পারি, তাতেই চলবে । তুমি বাড়ি চলে যাও, আমাদের জন্য দোয়া করো বাবা। ” আড়াল থেকে রিয়ার কথাগুলো শুনে ওর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আঁচলে চোখ মুছলেন রাজিনের মা।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১
জাপানের প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা | rita rita