মোঃ জাকির হোসেন চৌধূরী | বুধবার, ১১ আগস্ট ২০২১ | পড়া হয়েছে 239 বার
বনলতার দুই ভাই, সবাই এক মায়ের সন্তান। বনলতার মায়ের প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার সময় সেই ঘরে ছিল বড় ভাইটি। এরপর বনলতার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে বনলতা এবং তাঁর ছোট্ট ভাইয়ের জন্ম। ছোট্ট ভাই জন্মের প্রায় ছয় মাসের মধ্যে বনলতার মা মারা যায়। এর ছয় মাস পর বনলতার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। সেই মায়ের ঘরে আসে ছোট্ট একটি মেয়ে, যার ফলে সে হয় বনলতার সৎবোন।
এবার পুরোপুরি শুরুহয় বনলতা এবং তার দুই ভাইয়ের উপর সৎমায়ের অবিচার। এমনি দূর্যোগ সময়ে বনলতার বাবা মারা যায়। বছর খানেক ভীষন কষ্টের মধ্যে সৎমায়ের কাছেই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তার সৎ মা অন্য একটি পুরুষের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর আর থাকা হলোনা পৈতৃক বাড়িতে। বনলতার মামা-মামী তাদেরকে নিয়ে এলেন সৎ মায়ের কাছ থেকে নিজেদের কাছে। বনলতার বড় ভাইয়ের বয়স সতেরো, বনলতার বয়স এগারো এবং বনলতার ছোট্ট ভাইর বয়স সাত বছর। প্রায় ছয় বছর মামা-মামীর কাছে শত কষ্টের মাঝেও মোটামুটি ছিলেন তারা।
একদিন সেই শেষ আশ্রয় দাতা মামা চলে যান না ফেরার দেশে। এরপর থেকে বনলতা ও তাঁর ভাইদের কি অবস্থা হতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা থাকেনা। এবার একদিন হঠাৎ করেই বনলতাকে ভালোবেসে ফেলেন পাশের ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত ঘরের এক যুবক। বনলতার এক মামাতো ভাইয়ের সাথে ছিল ঐ যুবকের বন্ধুত্ব। সেই সুবাদে বনলতাকে তাঁর এই করুণ পরিনতি থেকে ভালোবাসার টানে বিবাহ করেন। এরপর শুরু হয় বনলতার নতুন জীবন। বনলতা জীবনে সব কিছু হারিয়ে ঐ যুবককে স্বামী হিসেবে পেয়ে নিজেকে ভীষন সুখী মনে করতে থাকেন।
একসময় বনলতার ঘরে একটি মেয়ে ও একটি ছেলের জন্ম হয়। বিবাহিত জীবনের দ্বীর্ঘ সময় বনলতা খুবই সুখী ছিলেন। বিবাহিত জীবনের আট বছর পর থেকে আজ ঊনিশটি বছর বনলতা শ্বাস কষ্ট এবং ডায়াবেটিস রোগের কারণে এখন একেবারেই ক্লান্ত। ওদিকে বনলতার স্বামীও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যা বনলতা কে কোনো ভাবেই বুঝতে দেয়নি। এমন এক কঠিন সময়ে দেশে চলছে মহামরী করোনা। বনলতার মেয়েটি বিয়ে হয়েছে। সেই মেয়ের কোল জুড়ে এসেছে একটি ফুটফুটে কন্যা। মেয়ের জামাই সহ বনলতার কাছেই থাকে মেয়ে ও বনলতার নাতনী।
বনলতার ছেলেটি ২য় বর্ষের ছাত্র। বনলতার মেয়ে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। আর বনলতার মেয়ের জামাই কেবল অনার্স সম্পূর্ণ করল। বনলতার শ্বশুর তার বিবাহের দুই বছর পূর্বে মারা যায়। এদিকে বনলতার বিবাহের সতেরো বছরের মাথায় শাশুড়ি মারা যায়। পৃথিবীতে বনলতা ও তার স্বামীর কোনো জমি এবং আশ্রয়ের একটি ঘর নেই। একসময় সবই ছিল। নদীতে ভেঙে যাবার পর থেকে এখন কিছু নেই। থাকেন ভাড়া করা বাড়িতে।
এদিকে বনলতার স্বামী পেশায় একজন সমাজসেবক। তিনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এছাড়াও একটি বেসরকারি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। বনলতার স্বামী দ্বীর্ঘ ঊনত্রিশ বছর যাবত সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত। দীর্ঘ জীবনের ক্ষণেও নিজের এবং পরিবারের জন্য কিছুই করতে না পারার ব্যর্থতায় বনলতার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। শুধু এইটুকুই সর্বদা বলে থাকেন কি হবে নিজেরা বিলাসী জীবন যাপন করে। সমাজের অসহায় দরিদ্র মানুষের দিকে একটিবার তাকিয়ে দেখ, তাদের জীবনের অবস্থা। সৃষ্টিকর্তা তাদের চেয়ে এখনো আমাদের কে অনেক ভালো রেখেছে। বনলতা তার স্বামীকে কিছুই বলতে পারে না। বনলতাও চায় সমাজের মানুষ গুলো ভালো থাকুক। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বনলতা সব কিছুই অন্ধকার দেখছেন। বনলতা তাঁর সৃষ্টি কর্তার কাছে জীবনে অনেক কিছুই চেয়েছিলেন কিন্তু এখন আর কিছুই চাওয়ার নেই।
মোঃ জাকির হোসেন চৌধূরী
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক
অগ্রদূত সংস্থা-এএস
ভোলা, বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সময়: ১:২৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১১ আগস্ট ২০২১
জাপানের প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা | rita rita